আজকাল এন্টিবায়োটিক দিয়েও অনেক সময় রোগ জীবানু মারা যাচ্ছে না - Go To Mars

Friday, March 9, 2018

demo-image

আজকাল এন্টিবায়োটিক দিয়েও অনেক সময় রোগ জীবানু মারা যাচ্ছে না

AdobeStock_76406533

ইলেক্ট্রিক ব্যাট টা লাগার সাথে সাথে টাশশ্ করে স্পার্ক-শক খেয়ে মশা টা নীচে পড়ে গেলো।
ভাবলাম মারা গেছে।
কিন্তু ও মোর খোদা!!
আধা মিনিটের মাঝে দেখি সে গা ঝাড়া দিয়ে আবার উড়াল দিলো।
কয়েক চক্কর দিয়ে দেখি দ্বিগুন উৎসাহে আবার আমাকেই কামড়াতে আসছে।
তার পরের দিনের ঘটনা,
বউ ইলেক্ট্রিক ব্যাট হাতে রুমের মশা নিধন চালাচ্ছে।
আমিও বসে নেই। অতি গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়ীত্বে আছি..
একটু পর পর আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছি
"ঐ যে একটা মশা.. ঐ আরেকটা"
কিছুক্ষনের মাঝেই একটা সার্থক ব্যাট-মশা সংঘর্ষের সাথে সাথে টাশ করে শব্দ এবং বিকট স্পার্ক হইলো।
বত্রিশ দাত বের করে বল্লাম 'ইয়েস!! মরসে। পুড়ে শুটকি হইসে।'
কিন্তু কি তাজ্জব!!!
মরা তো দূর কি বাত। এত্ত বড় স্পার্ক এর পড়েও সে কিছুই হয় নি এমনভাবে উড়তেই আছে।
অথচ এই স্পার্ক আমার গায়ে হলে আমি ভয়ে মূর্ছা যেতাম।
রহস্য টা কি?
মশা গুলা কি গায়ে গতরে বেশী বাড়লো?
নাকি আজকাল ইলেক্ট্রেক শক এর মাঝেও ভ্যাজাল ঢুকসে?
অন্য কারো সাথে এমন হচ্ছে কিনা জানি না, আমার সাথে কিছুদিন ধরে হচ্ছে।
শক লাগে। কিন্তু প্রায়ই মশা মরে না।
পরিচিত এক ছোট ভাই কে নক দিয়ে বললাম ঘটনা। সে আবার বিশেষ পন্ডিত ইলেক্ট্রিক জিনিসপাতির ব্যাপারে।
সে আমাকে সহীহ্ জ্ঞান দিলো,
"ভাই, আসলে তোমার ইলেকট্রিক ব্যাট এর চার্জ কম, তাই মরে না। তুমি এক কাজ করো আমরা যেমন জিহবা লাগায়া ঘড়ির ব্যাটারী টেস্ট করি, তুমিও তেমন জিহবা লাগায়া একটু টেস্ট করো তোমার ব্যাট টা। জিহবায় হালকা হালকা শক লাগলে বুঝবা ব্যাট ঠিক আছে। না লাগলে ব্যাট বাতিল"
পোলাডা মজা নিলো কিনা বুঝলাম না।
আমি নিরীহ টাইপ দেখে ছোট ভাই ব্রাদার রা প্রায়ই মজা নেয়।
তবে সে যাই হোক, জিহবা লাগায়া এক্সপেরিমেন্ট করার মত বুকের পাটা হলো না আমার।
মশা মারার অস্ত্র দিয়ে মশা মারা যাচ্ছে না,
এই প্রসংগে লিখতে লিখতে হঠাৎ মনে পড়লো এখন এন্টিবায়োটিক সপ্তাহ চলছে।
আমাদের সামনে বিশাল সমস্যা।
কারন আজকাল এন্টিবায়োটিক দিয়েও অনেক সময় রোগ জীবানু মারা যাচ্ছে না।
আমরা ডাক্তারেরা অসংখ্য রক্তের রিপোর্ট পাই, যেখানে দেখতে পাই যে রক্তের মাঝে জীবানু আছে, কিন্তু রিপোর্ট বলছে এ পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া কোন এন্টিবায়োটিকের আর ক্ষমতা নেই সেই জীবানু মারার।
অথচ এক সময় ঐ একই জীবানু মারার জন্য অনেক এন্টিবায়োটিক আমাদের হাতে ছিলো।
আজ সব অকেজো।
আমরা এটাকে বলি "এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স.."
মজা করে বললে বলা যায় মশা গুলোর মতই জীবানুগুলোও শিখে যাচ্ছে, কিভাবে এন্টিবায়োটিক এর মাঝে বাঁচতে হয়।
এর জন্য দায়ী আমি আর আপনি।
কিভাবে? উত্তর সোজা,
এন্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার এবং এন্টিবায়োটিক এর অসমপূর্ণ কোর্স।
দুই দিন এন্টিবায়োটিক খাবার পর যখন রোগ ভালো হয়ে যায়, তখন
"ধুর, আমি তো ভালো হয়েই যাচ্ছি, আরও পাঁচ দিন এত দামি এন্টিবায়োটিক খাওনের দরকার কি? ডাক্তারে তো বেকুব। সাত দিন বলসে এইটা খাইতে। ট্যাকা কি গাছে ধরে??"
এসব ভেবে খাওয়া বাদ দেওয়া হলো বিপদের কারন।
আপনি যখন কোর্স সম্পূর্ণ না করেন, তখন কিছু সংখ্যক জীবানু শরীরে বেচে যায়। তারা তখন বাইরের অন্য জীবানুদের বলে দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সেই অসম্পূর্ণ এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়তে হবে।
জ্বী, তারা বলে দিতে পারে।
সৃষ্টিকর্তা তাদের সেই ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন।
সুতরাং সাবধান হন।
কিভাবে হবেন?
মাত্র দুটো কাজ করে,
১. এন্টিবায়োটিক খাওয়া লাগলে নির্দেশিত কোর্স সম্পূর্ণ করবেন।
২. চিকিৎসক ব্যাতিত কারো দেওয়া এন্টিবায়োটিক খাবেন না।
শেষ খবর দেই,
গতকাল রাতে দেখি ইলেক্ট্রিক ব্যাট এর পাশা পাশি সনাতন পদ্ধতিতে হাত দিয়েই মশা মারছে বউ।
আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখে বললো, "কোন রিস্ক নাওয়া যাবে না"
মনে মনে ভাবলাম, রোগ জীবানুর ক্ষেত্রেও শেষ ভরসা হিসেবে এমন ১০০ তে ১০০ কাজ করবে, এমন সনাতন একটা পদ্ধতি থাকলে ভালো হতো। সব এন্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে গেলে অন্তত থাপড়ায়া চাপড়ায়া জীবানু মারা যাইতো।
লিখেছেন: Dr. Baapon Shahriar Parvez

No comments:

Post a Comment

পৃষ্ঠাসমূহ

Contact Form

Name

Email *

Message *