"চিকিৎসা ধান্দাবাজ" কিভাবে ধরলাম গল্প বলি.. - Go To Mars

Friday, March 9, 2018

"চিকিৎসা ধান্দাবাজ" কিভাবে ধরলাম গল্প বলি..



সেদিন ইবন সিনা হাসপাতালের সামনে বুড়া লোক একজন আমাকে ডাকলো, "বাবা একটু শুনবেন?"
আমি ঘুরে তাকালাম।
তাকিয়েই বুঝলাম এটা কোন পদের লোক।
এরা হচ্ছে সেই ধান্দাবাজ, যারা ভুয়া প্রেসক্রীপশন আর কয়েকটা ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে যে কোন হাসপাতালের সামনে রাস্তার মানুষ কে দেখায়।
এরপর সমবেদনা চায় এবং টাকা সাহায্য চায়।
চিনতে পারলেও আমি তাকে জবাব দিলাম, "জ্বী কাকা বলেন, কি ব্যাপার?"
সে বললো, " বাবা অনেক বিপদের মইধ্যে আছি.."
এরপর সে যা বললো তা হলো তার স্ত্রী এর "হাট"(হার্ট) এর মাঝে ফুটা আছে। এই ইবনে সিনা হাসপাতালেই ভর্তী। ডাক্তার বলেছে অনেক টাকা লাগবে। তার এত টাকা নেই। তার দুই ছেলে। কেউ নাকি টাকা দেয় না.. সে নিজেও নাকি "হাট" এবং "কিটনী" রোগী। এখন আমি যা পারি তা দিয়ে যেন সাহায্য করি.. ইত্যাদি ইত্যাদি..
আমি মনে মনে হাসলাম।
বেচারার আজ কপাল খারাপ। ভুল মানুষ টার্গেট করেছে।
সে জানে না যে আমি নিজেই পেশায় চিকিৎসক। তার উপরে এই ইবন সিনা হাসপাতালেই আমি কাজের স্বার্থে তো আসি ই, পাশাপাশি এখানের বন্ধুবান্ধব ডাক্তারদের সাথে আড্ডা দিতে প্রতিদিন অনেকবার যাওয়া আসা করি।
বুড়া কে আমি বললাম,
"বলেন কি কাকা? ইবনে সিনা হাসপাতালে কোথায় ভর্তী উনি? কত নাম্বার বেড এ? চলেন দেখে আসি"
সে ঘাবড়ালো না। বললো,
'না না বাবা, তারে দেখন যাইতো না। ডাক্তর রা তারে "আইচু" (ICU) তে রাখসে। দেখতে দেয় না কাউরে'
আমি বললাম,
"সমস্যা নাই কাকা, চলেন যাই। আমি এই হাসপাতালের ই ডাক্তার। চলেন কাকী রে আই.সি.ইউ তে দেখে আসি। আপনারেও আই.সি.ইউ তে ঢুকার ব্যবস্থা করে দেই একবার। এরপর সাহায্য যত পারি করবো"
এতক্ষনে বুড়ার মুখ টা একটু শুকায় গেলো। একটু ইতস্তত করে বললো,
"ওহ বাবা, আপনে ডাক্তর? ছি ছি, আপনার কাছে সাহায্য চাইলাম?? আপনাদের কাছে কত্ত ঋনি। আপনাদের থেইকা আর সাহায্য নিতাম না.. আমি গেলাম.. আসি বাবা..."
বলে সে রওনা দিলো।
আমি বললাম, "আরে দাড়ান কাকা। কই যান? চলেন কাকী রে দেখে আসি, সাহায্য না হয় নাই নিলেন। চলেন কাকীর বেড নম্বর চিনে আসি"
সে আবোল তাবল কি সব কথা বলে জোরে জোরে উল্টা দিকে হাটা দিলো।
আমি পেছন থেকে বললাম, "কাকা, দাড়ান.. কই যান? শুনেন.."
সে শুনলোই না।
আমি চিৎকার দিলাম, "ঐ শালা ধান্দাবাজ!! এক্ষন দাড়া.. এদিক আয়.."
আমার চিৎকার শুনে "হাট" এবং "কিটনী" রোগে আক্রান্ত সেই বুড়া বিশাল দৌড় দিলো। এই দৌড় আমি জোয়ান বয়সেও দিতে পারবো না। সে হার্ট আর কিডনী রোগী হয়ে কিভাবে এরকম "খিইচ্চা দৌড়" দিলো খোদা জানে!!
আমি আর পিছু নিলাম না।
এই হলো গল্প। ঘটনা ছিলো ২০১৪ এর।
জানেন কিনা জানি না,
ঐ বুড়ো লোকের মত ধান্দাবাজ কিন্তু ফেসবুকেও ভর্তী..
অনলাইনে ভুল খবর ছবি দিয়ে মানুষের সমবেদনা কাজে লাগিয়ে অনেকেই টাকা কামায়।
লেখা টা লিখার সময় এই মুহুর্তে আমি হাসপাতালে আছি। আমি যদি যে কোন বেড এর যে কোন একটা রোগীর ছবি তুলে আপলোড দিয়ে বলি মিথ্য করে বলি, "উনি গরীব অসহায়। উনার দুই বউ এবং পাচ ছেলেমেয়ে না খেয়ে আছে। উনার ক্যান্সার। উনার জন্য সাহায্য দিন।"
এরপর যদি সাথে আমার বিকাশ নম্বর দেই,
আমি নিশ্চিৎ,
কম না হলেও দিন শেষে হাজার পাচেক টাকা আসবেই।
তারপর সেই খবর শেয়ার হতে থাকলে তো টাকা বাড়বেই।
কেউ যাচাই বাছাই করে না। ছবি বা ভিডিও দেখলেই বিশ্বাস করে ফেলে।
এ ধরনের ধোকাবাজির উৎকৃষ্ট একটি উদাহরন হলো আমাদের "আহসান হবিব পিয়ার"..
মনে আছে তো তাকে??
যিনি ইউটিউব ভিডিও ব্যবহার করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি টাকা কামিয়েছেন। পরে ধরা পড়ে বলেছেন "এগুলা ইডিট করা যায় ভাই"।
উনি না হয় ঘুমে ছিলেন, উনার খবর ছিলো না।
কিন্তু আমরা একটু হুশে আসি না কেন?

লিখেছেন: Dr. Baapon Shahriar Parvez

No comments:

Post a Comment

পৃষ্ঠাসমূহ